এই ব্লগ হচ্ছে মূলতঃ আমার জীবনের পথে অর্জিত কিছু জ্ঞান এবং উপলব্ধির কথা। জ্ঞান বিতরনের সমস্যা হলো জেনারেলাইজ করতে গেলে সারবস্তু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে। যত গভীর জ্ঞান, তত সরল ও ক্ষুদ্র তার অবয়ব। তাই যত অল্প কথায় লেখা যায় সেটাই প্রচেষ্টা। সবচেয়ে ভালো হতো একেবারে না লিখে থাকতে পারলে। কারন জ্ঞানের সর্বোচ্চ জেনারেলাইজেশন হলো শুণ্যতা, যেটা অনেকটা ব্ল্যাকহোলের সমতূল্য। এমন কোন জ্ঞানের অস্তিত্ব নেই যেটা ধ্রূব বা সবার জন্য সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসলে সবার সবরকম জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, সবার জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতাও সমান নয়, বা জ্ঞান অর্জনের সুযোগও সবার সমানভাবে আসেনা। তার পরও ছোট ছোট করে কিছু লিখে রেখে যাই, অবিন্যস্তভাবে, যাতে কেউ তেমন ভাবতে না পারে যে তাদের জ্ঞান দিচ্ছি। আমার যতটুকু জ্ঞান অর্জনের সুযোগ এসেছে, সেটা আমার সন্তান এবং ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলেই আমার কাজটা মোটামুটি করা হলো। তার পরবর্তী দায়িত্ব তাদের। কে কিভাবে জ্ঞানটা নিতে বা ব্যবহার করতে পারবে, সেটা তাদের পরিস্থিতিই তাদের বলে দেবে।
Ego / অহম
- মানুষের 'অহম' হচ্ছে সেই বৈশিষ্ট্য যা তাকে আর সমস্ত জীব থেকে আলাদা করেছে। প্রতিটা মানুষের অহম তাকে প্রতিটি সচেতন মুহুর্তে আর সবার চেয়ে কোন অংশে সে যে কম নয়, বরং বেশী, সেটাই মনে করিয়ে দেয়। তাতেই শুরু হয় সংঘাত, যা মানব সভ্যতার প্রতিটি মুহুর্তে ফুটে ওঠে। অহমকে কোনভাবেই মেরে ফেলা যায়না, তবে তাকে দমিয়ে রাখা যায়। দমিয়ে রাখা মূলত প্রকাশ না করার সামিল। ভিতরে সেটা পোষাই থাকে।
'Ego' is what separates humans from all other living beings. Every conscious moment, ego reminds every human that he/she is not infeior to anyone he/she encounters, and on top of that he/she tries to prove that he/she is better than any other, in whatsover aspect, or through whatever logic that comes up at that moment. It is not possible to totally remove it, but it is possible to tame it to a level that it is not expressed in its ugly self. Whatever level it is tamed, it still remains inside
Ego প্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণ
প্রতিটা মানুষের কাছে সে-ই সারা বিশ্বভ্রহ্মান্ডের কেন্দ্র। সে-ই সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। এটাই Ego। Ego-কে আমরা মুছে ফেলতে পারিনা। কিন্তু এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয়েছে। টারজানের মতো একা জঙ্গলে থাকলে Ego প্রকাশের নিয়ন্ত্রনেরও প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আমরা সমাজে থাকি। সেখানে Ego-এর যথেচ্ছ প্রকাশ পালটা আঘাত বয়ে নিয়ে আসবেই। যুগপত সবার যথেচ্ছ Ego-এর প্রকাশের পরিনতি হচ্ছে একটা বিশৃংখল পরিস্থিতি যাতে সবারই বিপদ, যদিও সেটাই আমরা প্রতিনিয়ত দেখে যাছি। পালটা আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে Ego-এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রনে রাখাটাই তার নিজের অস্তিত্বের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। ছোট্ট বাবুটার Ego এর প্রকাশ সবচেয়ে বেশী। কারন সে অন্যদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে অবহিত না। তার সাধ্যমত যে কোন কিছু করে ফেলতে বা অন্তত দাবী করতে সে মোটেও দ্বিধান্বিত না। শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক বৃদ্ধি আসার কথা। এরই সাথে Ego-এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রনে রাখার ক্ষমতা বাড়তে থাকবে। তার কাজগুলো বা দাবীগুলো মার্জিত হতে থাকবে। তবে এটা একমুখী না। জীবন দীর্ঘ হতে থাকলে শারীরিকভাবে মানুষ দুর্বল হতে থাকে। সাথে মানসিক বৃদ্ধিও বিপরীতমুখী হওয়া স্বাভাবিক (৩৬:৬৮)। সেই ক্ষেত্রে Ego-এর প্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রন আবার কমা শুরু হতে পারে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কোন প্রকার detectable শারীরিক অসুস্থতার কারনে মানসিক বৃদ্ধি ব্যহত হলেও একই পরিনতি। এগুলি সমাজে গ্রহনযোগ্য। কিন্তু যদি দেখি আপাত সুস্থ কারো শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও সে তার Ego-এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা, তাহলে ধরে নিতে পারি দুর্ভাগ্যক্রমে তার মানসিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয়নি বা হচ্ছেনা। diagnose করা সম্ভব হয়নি বলে তাকে স্বাভাবিকদের দলে রাখা হয়েছে। সমাজে সে কোন প্রভাবশালী স্থানও দখল করে থাকতে পারে, যদিও তাতে সমাজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী (যেমনঃ মাফিয়া বস)। আসলে সে ছোট্ট বাবুটার মতোই অসহায়। অল্প একটু মানসিক বৃদ্ধি নিয়ে বেঁচে আছে। তার জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি। তবে পুনশ্চ বলি, বাস্তব জীবনের প্রতিটা পরিবেশে (যেমনঃ সংসার, অফিস, খেলার মাঠ) প্রতিটা দিন প্রতিটা পদক্ষেপে Ego-এর প্রকাশকে নিয়ন্ত্রন করাটা কঠিন, এবং একে একেবারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা- অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। Spectrum-এ ফেললে হয়তো দেখবো সবারই মানসিক বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধতা আছে, কারো কম কারো বেশী। তাই সেই কথা থাক। মোদ্দা কথা, আমরা এরকম বিশৃংখল পরিস্থিতিতেই জীবন কাটাতে থাকবো। তার মধ্যেই যতটা ভালো থাকা যায়। পরিশেষে বলতে পারি, সে ভাগ্যবানদের একজন যে, পুরোপুরি সফল হোক বা না হোক, প্রতিনিয়ত Ego-এর প্রকাশের নিয়ন্ত্রনের কথা নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে (২:২১৩)। আরো ভালো, যদি ভুলবশত নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললেও অনুশোচনা করতে পারে (৬:৫৪)।
ইগোর নিয়ন্ত্রণ সমাজের স্বার্থে
ইগোটার শুধু প্রকাশের নিয়ন্ত্রনই কি আমাদের লক্ষ্য? ধরে নেই, একজন দাবী করছে যে সে ইগো প্রকাশের নিয়ন্ত্রন করেছে। সে দৃশ্যত কোন বিশৃংখলতা সৃষ্টি করে না। তার বাক্য সংযত, তার ব্যবহার মার্জিত, সে কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করেনা, বাহ্য দৃষ্টিতে সমাজে সে ভালো মানুষ। কিন্তু শুধু সেটুকুই কি মানুষের লক্ষ্য? ইগো আসলে কি চায়? ইগো চায় একটা স্বীকৃতি। ‘আমি ওর থেকে উপরে আছি’- এটাই তার চাওয়া। এই চাওয়াটা অনির্বান। তার হাতিয়ার হিসাবে আছে কিছু রিপু, যেগুলো তার মতোই অনির্বান। লোভ (Greed) তার মধ্যে সেরা। আরো আছে। কিছুক্ষনের জন্য এগুলো চেপে রাখলেও কিছুক্ষন পরেই সে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সমাজে চলতে গিয়ে যখন খুব সহজেই ঈপ্সিত সম্মানটা বা স্বীকৃতিটা পাওয়া যায় না, তখন পালটা আঘাত থেকে বাঁচতে নাহয় আমরা ইগো প্রকাশের নিয়ন্ত্রন করলাম। বাহ্য দৃষ্টিতে সমাজের চোখে ভালো (যাকে আমরা বলি 'ভোদাই') হয়ে থাকলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ইগো কিন্তু তখনও স্বীকৃতি চেয়েই যাচ্ছে। তাকে কি নিয়ন্ত্রন করার দরকার নাই?
আগে দেখি, যদি নিয়ন্ত্রন না করি, তাহলে কি হতে পারে। হতে পারে আপাতত শান্তশিষ্ট এবং বাহ্য দৃষ্টিতে মার্জিত একজন মানুষ, অথচ ভিতরে ভিতরে সে ছুটছে টাকার পিছনে, সমাজে প্রতিষ্ঠার পিছনে। লোভ নামক রিপু তাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এগুলোর পিছনে। সে ঠিকই সম্মান চেয়ে যাচ্ছে। বাইরে তাকে ইগোহীন মনে হয়ে থাকলেও ভিতরে সে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইগোকে ইন্ধন জুটিয়ে যাচ্ছে। এই লোক কিন্তু আগের লেখার মাফিয়া বসের চেয়ে মানসিকভাবে অগ্রগামী। কারন তাকে দেখেই সাথে সাথে কেউ বুঝতে পারছেনা যে সে ইগোতে ভরপুর। তাই আরেকজন তুলনামূলকভাবে নীচু মানসিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লোক যে কিনা শুধু বাহ্যিক বেয়াদপীটাকেই ইগোর লক্ষন হিসেবে জানে, সে একে তার নিজের চেয়ে 'ভোদাই' ভেবে তার ইগোটাকে খুশী রাখতে পারছে। কথা হলো, এই ‘গোপনে’ ইগো পালনকারী লোকের মানসিক বৃদ্ধি কি সম্পূর্ণ হয়েছে? না, হয়নি। কারন তার কাজে সমাজের এবং অন্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক আছে। কারন সেই মাফিয়া বসের মতোই, মূলত সে কিন্তু নিজের চাহিদাটাই বেশী বড় করে দেখছে, এবং তাতে অন্যের ক্ষতি হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে খুব বেশী ভাবার সময় বা অবকাশ তার নাই। তার মানে শুধু ইগো প্রকাশের নিয়ন্ত্রন আছে এমন লোকজন থাকলেই সমাজ সুশৃংখল হয়ে যাবে সেটা ভাবার কোন কারন নাই। সমাজ তখনই সুশৃংখল হবে যখন সবাই তাদের ইগোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে, শুধু তার প্রকাশের নিয়ন্ত্রন না। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে সেরকম Utopian অবস্থা হবার সম্ভাবনা খুব শীঘ্র নাই, কারন নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা তো সবাইকে দেয়াই হয় নাই (২:২১৩)। যাদের দেয়া হয়েছে তারা ভাগ্যবান।
ইগোর নিয়ন্ত্রণ নিজের স্বার্থে
আত্মার জন্ম কোন এক অনাদি কালে। মাঝে সে আসে এই মাটির পৃথিবীতে। কিছু সময় সে এখানে পার করে, যে সময়টা তার একমাত্র কাজ হলো স্রষ্টার উপাসনা করা (৫১:৫৬)। এই কাজ শেষ হলে সে আবার সেই অনাদিকালে চলে যাবে। এই মধবর্তী সময়ে তার বাহন হিসাবে সে পায় তার শরীরটাকে। হ্যাঁ, শরীর শুধুই তার বাহন। তবে খেলাটা হলো, পার্থিব জগতে যদিও শরীরকে উপেক্ষা করে সে স্রষ্টাকে ডাকতে পারবে, তারপরও তাকে এই শরীরটাকে বেশীদিন বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। কারন যত বেশী দিন বাঁচা, তত বেশী দিন সুযোগ উপাসনা করার। তত বেশী সুযোগ বেশী পূণ্যার্জনের। কিন্তু বেশীদিন বাঁচলেই কি সব পূণ্যে ভরপুর হয়ে যাবে? না, কারন এই শরীরকে যে আবার কিছু অস্ত্র দেয়া হয়েছে। সেগুলি কি?
তার আগে ধরে নিচ্ছি শরীর কিন্তু অনাদি কালের কথা জানে না। সে শুধু জানে এই পার্থিব জীবনটাই তার সব কিছু। যখন সে মরে যাবে, তখন সে মাটিতে মিশে যাবে। এটা তাকে খুবই কষ্ট দেয়াই স্বাভাবিক। সে মরতে চায় না। আত্মার সাথে এই একটা ব্যাপারে তার মিল। তবে একটু তফাত এই যে, শরীর 'চায়' যথাসম্ভব বেশীদিন বেঁচে থাকতে, এবং পার্থিব জীবনটাকে সর্বোচ্চ উপভোগ করতে; আর আত্মার 'চাওয়া উচিৎ' শরীরকে ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পরিমান উপাসনা করতে। উপভোগ করার জন্য শরীরকে অস্ত্র বা হাতিয়ার হিসেবে দেয়া হয়েছে 'রিপু' (Evil Instinct)। এই রিপুর কাজ হচ্ছে আত্মাকে 'মোহ'-গ্রস্থ করে স্রস্টার উপাসনা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা (mystify)। এদিকে আত্মার হাতিয়ার হিসেবে দেয়া হয়েছে কিছু 'গুন' (virtue), যাদের কাজ হচ্ছে সেই মোহ থেকে তাকে ফিরিয়ে এনে উপাসনার (worship) -এর দিকে নিয়ে যাওয়া। তাই উপাসনা মানে হচ্ছে শরীরটাকেই ব্যবহার করে তাকে স্রস্টার উপাসনায় ব্যস্ত রাখা। তবে এই কাজটাকে আরো কঠিন করে দেয়ার জন্য শরীরকে দেয়া হয়েছে সেই 'অহম' বা ego, যার কাজ হচ্ছে নিজেকে অন্যান্য সকলের থেকে শ্রেয়তর ভাবা। সবচেয়ে চূড়ান্ত ক্ষেত্রে অহম মানুষ্কে তার স্রস্টার থেকেও শ্রেয়তর ভাবা শুরু করতে থাকে। এর মধ্যে দিয়ে সে চূড়ান্ত রিপু 'মায়া' (Illusion)-এর নিকৃষ্টতম প্রান্তে পৌঁছে যায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই 'রিপু' আর 'অহম'-এর চাপে পড়ে আত্মা বেচারার যে 'গুন'-গুলি আছে সেগুলির যথার্থ ব্যবহার করতে না পারার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। তার মানে বেশীদিন বাঁচা মানেই বেশী পূণ্য অর্জন সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। অনির্বান এই 'রিপু' আর 'অহম' আমাদের আত্মাটাকে বারবার নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে স্রষ্টার উপাসনার মূল পথ থেকে দূরে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের ভালো হাতিয়ার বা 'গুণ', যেটাও অনির্বান, সেগুলিকে ব্যবহার করে শরীরকে উপাসনার পথে নিয়ে আসা। এইজন্যই সুস্থ এবং দীর্ঘ জীবন একটা আশীর্বাদ, যা আমাদের বেশ অনেকবার সুযোগ দিবে উপাসনার পথে চলার। তাই বলে ইচ্ছামত আগে রিপুর ব্যবহার করে নিবো, আর পরে স্রস্টার কাছে মাফ চেয়ে পূন্যের পথে আসবো সেটা মূলত নিজের সাথে প্রতারণা।
Copyright 2013. All rights reserved.